• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মেসির অশ্রুসিক্ত বিদায় 


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২১, ০৪:৩৯ পিএম
মেসির অশ্রুসিক্ত বিদায় 

মেসির সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগে ন্যু ক্যাম্পের বাইরে অসংখ্যা দশর্কদের ভিড় জমেছিলো। পিকে, আলবাসহ বার্সার অনেক খেলোয়াড়ই সংবাদ সম্মেলন কক্ষে উপস্থিত ছিলেন। চোখের পানি ধরে রাখতে না পেরে কেদেই চলেছেন মেসি। কোন কথাই বলতে পারছেন না তিনি, কণ্ঠ ধরে আসছে ৩৪ বছর বয়সী অধিনায়কের। 

সংবাদ সম্মেলনে মেসি বলেন, গত কয়েকদিনে অনেক ভেবেছি কী বলব এখানে। সত্যিটা হচ্ছে কী বলব বুঝে উঠতে পারছি না। জীবনের এতগুলো বছর এখানে কাটানোর পর আমার জন্য আজকের দিনটা অনেক বেশি কঠিন। 

গত বছরের ঘটনাও টেনে আনেন তিনি। বলেন, গত বছর বুরোফ্যাক্স নিয়ে নাটকের সময় আমি কী বলব সেটা ঠিক করে রেখেছিলাম। কিন্তু এ বছর সবকিছুই ভিন্ন। এটা আমার ঘর, আমাদের ঘর। আমি এখানে থাকতে চেয়েছিলাম। সেটাই পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু আজ সবকিছু ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে। 

ক্লাব ছেড়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, "১৩ বছর বয়সে এই ক্লাবে এসেছিলাম আমি। আজ প্রায় ২১ বছর পর ক্লাবটা ছেড়ে যাচ্ছি। ক্লাবটাতে যা করেছি, তা নিয়ে আমি গর্বিত। এভাবে বিদায় নিতে হবে কখনো ভাবিনি। মনে হয় না কেউই ভেবেছে। চেয়েছিলাম মাঠভর্তি দর্শকের শেষ একবারের অভ্যর্থনার মধ্যে বিদায় নিতে।" 

আবারও ফিরে আসতে চাইছেন মেসি, "দেড় বছর ধরে মাঠে আমাদের সমর্থকদের দেখতে পাইনি। তাঁদের না দেখে বিদায় নিতে হচ্ছে, এই ব্যাপারটাই বেশি কষ্ট দিচ্ছে। তবে আমি এখানে আবার ফিরব, এটা আমার ঘর। আমার সন্তানদেরও আমি কথা দিয়েছি, আমি আবার এখানে ফিরে আসব।" 

বার্সার হয়ে মেসির অর্জন

মেসির বক্তব্য শেষে আবারও কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন মেসি। সবাই করতালি দিয়ে অভিবাদন জানালেন মেসিকে। 

মেসির বিশেষ মুহুর্ত, "এত এত মুহূর্তের মধ্যে কোনো একটি বেছে নেওয়া কঠিন। কত শত দারুণ মুহূর্ত কেটেছে, তবে কিছু কঠিন মুহূর্তও ছিল। তবে একটি বেছে নিতে হলে আমি বলব, আমার অভিষেক। সেখান থেকেই সবকিছুর শুরু, আমার প্রথম স্বপ্ন পূরণ।" 

ক্লাবে থাকতে চাওয়ার বিষয়ে মেসি বলেন, "আমি ভেবেছিলাম সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে গেছে, সব বিষয়ে সম্মতি হয়ে গেছে। এরপর একেবারে শেষ মুহূর্তে জানা গেল লা লিগার নিয়মের কারণে চুক্তি নবায়নকে আনুষ্ঠানিক করা সম্ভব হচ্ছে না। ক্লাবের ভেতরে কী হয়েছে আমি বলতে পারছি না। সভাপতি জানিয়েছেন চুক্তি নবায়ন হয়নি লা লিগার নিয়মের কারণে। আমি এখানে থাকার জন্য যা কিছু করা সম্ভব সব তার সবকিছুই করেছি। গত বছর চাইনি সেটাও বলেছি। এ বছর আমি থাকতে চেয়েছি, কিন্তু পারিনি। সবাই নিশ্চিত ছিল যে আমি এখানেই থাকব। সমর্থকদের সঙ্গে সব সবসময় আমি আমার দিক থেকে আমি লয়্যাল থেকেছি।আমি কখনোই ক্লাবের সমর্থকদের সঙ্গে প্রতারণার চেষ্টা করিনি।" 

ক্লাব ছেড়ে যাওয়া কতটা কঠিন জানিয়ে মেসি বলেন, "এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে আমি এই ক্লাবটা, এই জায়গাটা ছেড়ে যাচ্ছি। আমার জীবন পুরো বদলে যাচ্ছি। এখন আবার শূন্য থেকে শুরু করতে হবে। বড় বদল এটা, আমার পরিবারের জন্যও এই শহর ছেড়ে যাওয়া কঠিন হবে। তবে আমরা ঠিকঠাকই থাকব। কঠিন চ্যালেঞ্জ এটা, তবে এটা মেনে নিতেই হবে, নতুন করে শুরু করতে হবে।" 

নতুন ক্লাবের বিষয়ে মেসি বলেন, "পিএসজি একটা সম্ভাবনা। তবে সত্যি বলতে আজ পর্যন্ত কারও সঙ্গেই কিছু চূড়ান্ত হয়নি। ক্লাব ছাড়ার খবরের পর থেকে অনেক ফোন এসেছে, অনেক ক্লাবই আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।" 

মেসিকে ছাড়া বার্সা কিভাবে মানিয়ে নিবে এমন প্রশ্নের জবাবে মেসি বলেন, "বার্সা বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্লাব, দারুণ একটা ক্লাব। নতুন খেলোয়াড় আসবে। লাপোর্তা তো বলেছেনই যে ক্লাব কারও চেয়ে বড় না। সমর্থকেরা এটার সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন। সব সময়ই এমনটা হয়েছে। ক্লাবে অনেক দারুণ খেলোয়াড় আছে। আশাকরি সবকিছুই শেষ পর্যন্ত ঠিকঠাকভাবেই চলবে।" 

লা লিগার সভাপতির বিষয়ে লিও বলেন, "আমি শুধু জানি লা লিগার কারণে এটা সম্ভব হয়নি, ক্লাবের ঋণের কারণে সম্ভব হয়নি। ক্লাবের পক্ষে ঋণ আরও বাড়ানো সম্ভব না।  তেবাসের ব্যাপারে আমার কিছুই বলার নেই। তার সঙ্গে আমার দেখাই হয়েছে মাত্র কয়েকবার। প্রতিবারই আলোচনাগুলো বন্ধুত্বপূর্ণই ছিল। তেবাসের সঙ্গে আমার কোনো বিবাদ নেই।" 


বাড়ি ফিরার অনুভূতি জানিয়ে মেসি বলেন, "সবকিছু ঠিকঠাক হওয়ার পর গত কয়েকদিন আমার জন্য খুব কষ্টের ছিল। এখন বাড়ি ফিরলে সবকিছু আমার আরও খারাপ লাগবে। তবে এই মুহূর্তটাতে আমার পরিবারের আরও কাছে থাকা দরকার। ফুটবল খেলে যাওয়া দরকার। যে কাজটা আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি। একবার ফুটবল খেলতে শুরু করলে আশাকরি সবকিছু আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে যাবে।" 

মেসির আক্ষেপ, "আমি আরও চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে চাইতাম। লিভারপুলের বিপক্ষে সেমিফাইনাল, চেলসির বিপক্ষে সেমিফাইনাল ছিল কষ্টের। আমার আর কোনো আক্ষেপ নেই। আমি সব সময় সব কিছু দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমাদের যে দারুণ খেলোয়াড়দের ছিল, তাতে আমরা আরও চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে পারতাম।" 

এরই মাধ্যমে শেষ হলো বার্সার সঙ্গে ২১ বছরের পথচলা। বার্সোলোনার হয়ে ৭৭৮ ম্যাচে ৬৭২ গোল ও ৩০৫টি অ্যাসিস্ট রয়েছে মেসির। ক্লাবের হয়ে ১০টি লা লিগা, ৭টি কোপা দেল রে, ৮টি সুপার কোপা, ৪টি উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ৩টি উয়েফা সুপার কাপ ও ৩টি ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপ রয়েছে মেসির। দেশের হয়ে তিনি জিতেছেন কোপা আমেরিকা। এছাড়া ৬টি ব্যালন ডি'অরের মালিক তিনি। 

Link copied!